ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

আদালতে অভিনব রায়ে সন্তুষ্ট আসামি

চকরিয়ায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে উল্টো জেলহাজতে বাদি :

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়ায দীর্ঘদিন ধরে প্রতিপক্ষের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। এই বিরোধের জেরে খুশি আক্তার নামের এক নারী বাদি হয়ে মামলাও করেন। আসামী করা হয় প্রতিপক্ষের তিনজনকে। তবে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে সত্য ঘটনা।

পুলিশ আদালতে সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার দেব উল্টো বাদি খুশি আক্তারকে জেল হাজতে পাঠান এবং মামলাটিও খারিজ করে দেন। চাঞ্চল্যকর এই রায়ে কক্সবাজারের চকরিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিএসআই (ইন্সপেক্টর) মো.শফিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার বাদি খুশি আক্তার (৩০) চকরিয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের করাইয়াঘোনার আবদুল মজিদের স্ত্রী।

তিনি বলেন, গত ২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি মামলার বাদি খুশি আক্তার চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি এজাহার দায়ের করেন।

ওই এজাহারে বাদি উল্লেখ করেন গত ২১ সালের ৩০ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের করাইয়াঘোনার আবদুল করিম, রেশমী আক্তার ও সাজেদা বেগম পরিকল্পিকভাবে বাদি খুশি আক্তারের বসতঘরে ডুকে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারধর করে মাথা ফাঁটিয়ে দেয় এবং স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।

এই ঘটনায় খুশি আক্তার বাদি হয়ে ২১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি এজাহার দায়ের করেন। এতে উপরোক্ত তিনজনকে আসামী করা হয়।

পরে আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার দেব এজাহারটি আমলে নিয়ে চকরিয়া থানাকে মামলা হিসেবে রেকর্ড এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্যও আদেশ দেন। পরবর্তীতে চকরিয়া থানা পুলিশ আদালতের নির্দেশে মামলাটি এন্ট্রি করেন। এরপর থেকে আসামীরা গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘদিন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, চকরিয়া থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত শুরু করেন। পুলিশ তদন্তে বাদি খুশি আক্তার প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজেই নিজের মাথা ফাঁটিয়েছেন বলে প্রমাণ পাই। সোমবার (১৭ এপ্রিল) চকরিয়া থানা পুলিশ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তদন্ত প্রতিবেদনটি আমলে নেন। সবকিছু যাছাই-বাছাই শেষে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক রাজিব কুমার দেব তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে বাদি খুশি আক্তারকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং মামলাটি খারিজ করে দেন।

এই মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মামলার আসামী আবদুল করিম। তিনি বলেন, সেদিন আমাদের সাথে কোন ঘটনাই ঘটেনি। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছিলো খুশি আক্তার। বিজ্ঞ বিচারকের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেয়েছি।

এদিকে, আদালতের এই ধরনের রায়ে সন্তুষ্টু প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। তারা মনে করেন আদালতের প্রতি সাধারণ মানুষের যে বিশ্বাস রয়েছে তা আবারও প্রমাণ হয়েছে এই রায়ের ফলে। এতে করে যারা প্রতিপক্ষকে হয়রানি ও গায়েল করার জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করেন, তাদের জন্য একটি বার্তা ।

 

পাঠকের মতামত: